Suicide Prevention

🔰 আত্মহত্যা কি?

আত্মহত্যা হল ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের মৃত্যু ঘটানো।

আত্মহত্যা এমন একটি কার্যকলাপ যা সামাজিক, নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে নিজের জৈবিক মৃত্যুর লক্ষ্য এবং ফলাফলের দিকে নিয়ে যায়।

🔰 আত্মঘাতী আচরণের ধরনঃ

‌‌‌>> আত্মঘাতী ধারণা/চিন্তা

>> আত্মহত্যার হুমকি (ইঙ্গিত)

>> আত্মহানিমূলক আচরণ

>> নিজেকে কোনো আঘাত করা ছাড়াই আত্মহত্যার চেষ্টা

>> নিজেকে আঘাত করার দ্বারা আত্মহত্যার চেষ্টা

>> আত্মহত্যা করা

🔰 আত্মহত্যার ব্যাপকতা:

# আত্মহত্যা করে ৫ থেকে ১২ লাখ মানুষ মারা যায় (UN,1996) ।

# ২০০০ সালে ১০ লাখের মতো মানুষ আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করেছে (Who)।

# প্রতি ৪০ সেকেন্ডে আত্মহত্যার দ্বারা একটি মৃত্যু হয়।

# ১৫ বছর থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা।

# কিছু দেশে আত্মহত্যা ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

# বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার সংখ্যা প্রতি ১০০,০০০ জনে ১৬ জন।

# ১,০০০ জনের মধ্যে ৯ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করে থাকে।

# প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন আত্মঘাতী চিন্তা করে থাকে।

বছরে আনুমানিক 703,000 মানুষ সারা বিশ্বে তাদের জীবন নেয়।  প্রতিটি আত্মহত্যার জন্য, সম্ভবত আরও 20 জন আত্মহত্যার চেষ্টা করছে.

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী রয়েছেন ৪৯ শতাংশ, ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩৫ শতাংশ, ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১১ শতাংশ। তাছাড়া নারীদের আত্মহত্যার হার বেশি। এই সময়ে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাটা ৫৭ শতাংশ এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৩ শতাংশ ছিল। (১৩মার্চ, ২০২১, প্রথম আলো)।

পৃথিবীতে প্রতিদিন ১ লাখ মানুষের মধ্যে ১৩,০৪২ জন আত্মহত্যা করে। মেয়েদের থেকে ছেলেদের আত্মহত্যার পরিমাণ ৩ গুণ বেশি।

পৃথিবীতে প্রতিদিন গড়ে ১৩২ জন আত্মহত্যা করে। আর বাংলাদেশে প্রতি বছরে প্রতি লাখে গড়ে ১২,৮০৮ আত্মহত্যা করে। যা উর্ধবমুখী।

বাংলাদেশের মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ২০১৯-২০ কোভিড সময়ে বাংলাদেশে আত্মহত্যা করছে ১৪,৪৩৬ জন। যাদের মধ্যে ২০-৩৫ বয়সের মানুষ বেশি আত্মহত্যা প্রবণ।

🔰 আত্মঘাতী আচরণের কারণঃ

>> জীবনের অর্থ এবং আশা হাড়িয়ে ফেলা।

>> হতাশা এবং রাগ।

>> আন্তঃব্যক্তিক সংকট।

>> ব্যর্থতা এবং অবমূল্যায়ন।

>> অন্তর্দ্বন্দ্ব।

>> মানিয়ে চলার দক্ষতার অভাব।

>> চাপমূলক ঘটনা এবং পরিস্থিতি

>>  সামাজিক বিচ্ছিন্নতা

>>  মারাত্মক অসুস্থতা

>> প্রতিকূল পরিবেশ

>> পেশাগত চাপ

>> মুড এবং চিন্তার পরিবর্তন

>> অ্যালকোহল এবং অন্যান্য ঔষধের ব্যবহার

>> মানসিক রোগ

>>  মডেলিং: আত্মহত্যার সংক্রমণ

>>  সহপাঠী বা সহকর্মী প্রভৃতি

আত্মহত্যাকারীদের মস্তিষ্কের পরীক্ষা করে (Fabio Di Narzo et al., 2014) দেখা যায়, যারা আত্মহত্যা করে তাদের Serotonin গ্রহণকারী receptor অন্যদের তুলনায় কম থাকে।

🔰 আত্মঘাতী আচরণের কিছু তথ্যঃ

গ্রামীণ অঞ্চল থেকে শহরে আত্মহত্যার হার বেশি।

আত্মঘাতীর মাঝে ৯০-৯৪% আগে থেকেই মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকে, ৫০% এর কম ডিপ্রেশনে আক্রান্ত থাকে, ৩৪% অ্যালকোহল অপব্যবহার করে থাকে, ১৩% সিজোফ্রেনিয়ায় আক্তান্ত থাকে।

৫০-৮০% তাদের পরিকল্পিত পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে।

🔰 আত্মহত্যামূলক আচরণের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনঃ

আবেগপ্রবণ।

দ্বিমুখী চিন্তাভাবনা।

আশাহীনতা।

সমস্যা সমাধানের অক্ষমতা।

জ্ঞানীয় অনমনীয়তা।

মানসিক চাপপূর্ণ জীবনের ঘটনা।

অসহায়ত্ব।

অকার্যকর মনোভাব।

মানসিক ব্যাধির প্রবণতা।

🔰 আত্মঘাতী ব্যক্তির সতর্ক সংকেতমূলক আচরনঃ

√ আত্মহত্যা করার কথা বলবে।

√ খেতে বা ঘুমাতে সমস্যা হয়।

√ আচরণে তীব্র পরিবর্তন অনুভব করে।

√ বন্ধু এবং সামাজিক কার্যকলাপ থেকে প্রত্যাহার করে।

√ শখ, কাজ, স্কুল ইত্যাদিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

√ মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয় এবং চূড়ান্ত ব্যবস্থা করে থাকে।

√ নিজের অতি প্রিয় জিনিসপত্র অন্যকে দিয়ে দেয়।

√ এর আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

√ অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নেয়।

√ সাম্প্রতিক গুরুতর ক্ষতি হয়েছে।

√ মৃত্যু এবং মারা যাবার চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

√ তাদের ব্যক্তিগত রূপের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

√ তাদের অ্যালকোহল বা ড্রাগের ব্যবহার বৃদ্ধি করে।

🔰 আত্মহত্যা কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

√ আত্মঘাতী ব্যক্তির প্রতি কঠোর না হওয়াম তাদের কাজকে বিচার না করা।

√ তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।

√ তাদের মর্যাদা রক্ষা করা এবং তাদেরকে অপমান না করা।

√ তাদেরকে উদ্বেগ প্রকাশ করতে এবং পরিকল্পনা করতে উৎসাহিত করুন।

√ যদি প্রচেষ্টা করে থাকে তবে প্রথমে তাকে শান্ত করুন।

√ সরাসরি কথা বলুন। আত্মহত্যা সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলুন।

√ আত্মহত্যা করা সঠিক নাকি ভুল, এটা করলে ভাল লাগবে না খারাপ লাগবে; তা নিয়ে বিতর্কে না যাওয়া । জীবনের মূল্য সম্পর্কে বক্তৃতা না দেয়া।

তাদের প্রতি আগ্রহ এবং সমর্থন দেখান।

√ অবাক হবার ভান না করা। এটি আপনার ও তার মধ্যে দূরত্ব তৈরি করবে।

√ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন, অস্ত্র বা ওষুধ থাকলে তা সরিয়ে ফেলুন।

√ যদি আত্মহত্যার ঝুঁকি চিহ্নিত করা যায়, তাহলে নিকটস্থ সাহায্য কেন্দ্র ভর্তি করতে হবে।

🔰 কি করা থেকে আমাদেরকে বিরত থাকা উচিৎ?

আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে ঝুঁকি আসন্ন তাহলে তাকে একা ছেড়ে যাবেন না।

কখনই অনুমান করবেন না যে ব্যক্তিটি ‘এই টাইপ’ নয়।

আত্মহত্যার নৈতিকতা নিয়ে বিতর্ক করবেন না বা ব্যক্তির উপর অপরাধবোধ চাপিয়ে দেবেন না।

অন্যের সামনে তাকে অপমান করবেন না।

তাকে কোনো অবমাননাকর কাজে নিয়োজিত করবেন না।

এটা গোপন রাখবেন না।

তার কষ্টের কথা মনোযোগ দিয়ে নিরপেক্ষভাবে শুনুন।সহানুভূতিশীল হওয়ার চেষ্টা করুন।

প্রয়োজনে মনোবিজ্ঞানীদের সাহায্য নিন, এমনকি হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হলে সেটির ব্যবস্থা করা ।

🔰 হাতের লেখা বিশ্লেষণ করেও কি আত্মহত্যা সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়া যায়?

যারা আত্মহত্যা করেছে বা চেষ্টা করেছে তাদের হাতের লেখা বিশ্লেষণ করে অনেক কমন বিষয় পাওয়া গিয়েছে। যেমনঃ নিজের সিগনেচার দেওয়ার ক্ষেত্রে এমনভাবে স্বাক্ষরের উপরে টান দেয় যেটা দেখে মনে হয় যে সে স্বাক্ষরটা কেটে দিয়েছে বা নিজের সিগনেচার দিয়ে সেটি গোল বৃত্ত এর মধ্যে রাখে, লেখা বাম থেকে ডান দিকে লিখার সময় সোজাসুজি না হয়ে নিচের দিকে নেমে যায় , একটি শব্দ থেকে অন্য শব্দের মধ্যে অনেক ফাঁকা জায়গা থাকে, লেখা বেশি বাম দিকে বাকানো থাকে অথবা একটি শব্দের মধ্যে কয়েকটা অক্ষর বাম দিকে এবং কয়েকটা অক্ষর ডানদিকে করে এলোমেলো ভাবে থাকে, লেখার সাইজ এ মধ্যেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় অর্থাৎ একই পেইজ এর মধ্যে কিছু অক্ষর বড় আবার হঠাৎ ছোট করে লিখে, লেখার লাইন এর শেষ শব্দটি বা অক্ষরটি হঠাৎ করে নিচের দিকে নেমে যায়, লিখা অনেক বেশি চাপ দিয়ে লিখে, একটি পেইজ এর ডান পাশ লেখার জায়গায় না থাকলেও শব্দের কিছু লেখা পেইজ এর বাহিরে লিখে, একটি শব্দ কেটে দেওয়ার প্রয়োজন হলেও সেটিকে অনেকবার কাটবে, ইত্যাদি। এইছাড়াও আরো অনেক বৈশিষ্ট্যে আছে যেইগুলা দেখে গ্রাফোলজিস্টরা সহজেই নির্ণয় করতে পারে কার মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি আছে।

লেখকঃ

মোঃ মিরাজ হোসেন, সাবিরা নওশিন

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ফরেনসিক সাইকোলজি এন্ড  সায়েন্সস

Address: 1/85/C, 1st floor, Eastern Banabithi Shopping Complex (Dosh Tola Market),420 Dakhin Banasree Project Road, Dhaka 1217, Bangladesh.