সফট স্কিল কেনো এতো গুরুত্বপূর্ণ
কর্মক্ষেত্রে সফলতার জন্য মূলত দুই ধরনের স্কিল বা দক্ষতা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এদের মধ্যে একটি হচ্ছে হার্ড স্কিল এবং অপরটি হচ্ছে সফট স্কিল। কোডিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সম্পাদনা কিংবা ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি মূলত হার্ড স্কিলের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে সফট স্কিল হচ্ছে ব্যক্তির বিশেষ কিছু চারিত্রিক ও ব্যক্তিগত গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য, যেমন - সৃজনশীল চিন্তাভাবনা, সমালোচনামূলক মনোভাব, সমস্যা সমাধানের কৌশল, সহকর্মীদের সাথে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক বজায় রাখা, দলগতভাবে কাজ করা, নেতৃত্ব প্রদান করা, সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হওয়া জগত সম্পর্কে ধারণা রাখা ইত্যাদি সবই সফট স্কিলের অন্তর্ভুক্ত।
কর্মক্ষেত্রে হার্ড স্কিল যতটুকু দরকারী, ঠিক ততটুকুই দরকারী সফট স্কিল। হার্ড স্কিল দ্বারা খুব সহজেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করা গেলেও, সফটস্কিল ব্যতিত চাকরিতে টিকে থাকা আরো কঠিন।
চলুন সফট স্কিল সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণা লাভ করি এবং এটি কেনো এতো গুরুত্বপূর্ণ সেই সম্পর্কে জানি।
⬜সফট স্কিল কি?
কর্মক্ষেত্রে একজন কর্মচারীর আচরণ, চারিত্রিক এবং ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলোই হচ্ছে সফট স্কিল। আপনার কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতার উপর সফট স্কিল নির্ভর করে। সফট স্কিল কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক উন্নত করে, যার ফলে তারা মিলেমিশে দলগতভাবে কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারে।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তারা কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে হার্ড স্কিল এবং সফট স্কিল উভয়ের অধিকারী ব্যক্তিকেই যোগ্যপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন।
সফট স্কিলগুলো হচ্ছে :
➡ সৃজনশীল চিন্তাভাবনা
➡ সক্রিয় শ্রোতা
➡ সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা
➡ দলগত দক্ষতা
➡ যোগাযোগ দক্ষতা
➡ পেশাদার মনোভাব
➡ নেতৃত্ব প্রদান
➡ সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, ইত্যাদি।
⬜সফট স্কিল কেন গুরুত্বপূর্ণ?
➡ কর্মজীবনে অগ্রগতি এবং পদোন্নতি :
বর্তমানে কর্মচারী নিয়োগে পেশাদারী দক্ষতার পাশাপাশি সফট স্কিলে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। কেননা ব্যক্তির সফট স্কিল যতো বেশি তার নেতৃত্বদানের ক্ষমতাও ততটা ভালো যা তাকে কর্মজীবনে সাফল্যের চূড়ায় পৌছে দেয়।
➡ আধুনিক কর্মক্ষেত্র :
আধুনিক কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজন একজন সক্রিয় শ্রোতা, সৃজনশীল ব্যক্তি, দলকর্মী, নেতৃত্ব এবং শক্তিশালী যোগাযোগ কৌশল। বর্তমানে চ্যালেঞ্জিং শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত এবং স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে সফট স্কিল অত্যাবশ্যক।
➡ গ্রাহক এবং ক্লায়েন্ট :
প্রতিযোগিতামূলক বাজারে গ্রাহক এবং ক্লায়েন্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন গ্রাহক পরিসেবা প্রদান করেন। এক্ষেত্রে যোগাযোগ দক্ষতা যত বেশি হবে প্রতিষ্ঠান তত কম খরচে লাভবান হবে।
➡ কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি :
সফট স্কিল ব্যক্তির উৎপাদনশীলতা এবং পেশাদারী কৃতিত্বের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। সময় ব্যবস্থাপনা এবং বিভিন্ন চ্যালেন্জের উপর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কাজের গতিকে তরান্বিত করে এবং সহকর্মীদের সাথে প্রত্যাশিত লক্ষে পৌঁছাতে সহায়তা করে।
➡ ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র সফট স্কিলের চাহিদা :
বর্তমানে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। অটোমেশন প্রযুক্তিকে এমন সব কঠিন কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম করেছে যা একটা সময় হার্ড স্কিল দ্বারা সম্পাদন করা হত। যার ফলে কর্মক্ষেত্রে সফট স্কিল যথা - যোগাযোগ, সৃজনশীলতা, যৌক্তিক যুক্তি, টিম ওয়ার্ক, ইত্যাদির চাহিদা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
➡ পেশাদার সম্পর্ক গড়ে তুলে :
সফট স্কিল স্বাস্থ্যকর পেশাদার সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে। সফট স্কিলগুলোর মধ্যে সহমর্মিতা পেশাদার সম্পর্কে সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে আপনার আচরণ আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদেরকে প্রভাবিত করে। সহকর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারা এবং তাদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়ার মাধ্যমে আপনার একটি সম্মানজনক ইমেজ গড়ে উঠবে।
➡ সফট স্কিল স্বয়ংক্রিয় নয় :
প্রতিষ্ঠানসমূহে অটোমেশন প্রযুক্তিগত দিকটির দায়িত্ব গ্রহণ করলেও মানসিক বুদ্ধিমত্তা মেশিন দ্বারা অনুশীলন করানো কঠিন। যা কিনা সফট স্কিলসমূহকে আরো মূল্যবান করে তোলে। তবে নরম দক্ষতা শেখানো কিংবা পরিমাপ করা যায় না৷ ফলস্বরূপ অনেক প্রতিষ্ঠানই সফট স্কিল বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন সফট স্কিল ট্রেনিংয়ের সাহায্য নেন।
➡ নিয়োগকারীদের চাহিদা :
নিয়োগকারীরা প্রার্থীর কাজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার তুলনায় সফট স্কিলসমূহকে অধিক প্রাধান্য দেন। চিত্তাকর্ষক যোগাযোগ দক্ষতা এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী প্রার্থীরা এক্ষেত্রে এগিয়ে যায়। তাছাড়াও সফট স্কিল একজন কর্মচারীর কর্মদক্ষতার উন্নতি সাধন করে যার ফলে পরবর্তীতে পদোন্নতি ঘটে।
➡ দলগত কাজের দক্ষতা পরিমাপ করে :
কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি বিভাগেই একজন কর্মচারীকে তার সহকর্মীর সাথে কিংবা একটি টিমের মধ্যে কাজ করতে হয়। আশেপাশে একগুচ্ছ লোক থাকার ফলে ব্যক্তি অনুপ্রাণিত হন এবং দ্রুত কাজ শেষ করতে পারেন। নিয়োগকারীরাও এমন একজন ব্যক্তিই সন্ধান করেন যে কিনা কোম্পানির সামগ্রিক বিষয়ের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে।
➡ আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে :
সফট স্কিলসমূহের অধিকারী ব্যক্তিরা তাদের পেশাদার জীবন নানা সুযোগ-সুবিধা লাভ করে। কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পুনর্গঠন ঘটে এবং আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস কর্মক্ষেত্রে তার আচরণের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় এবং সে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই সমস্যার সমাধান করে। তাছাড়াও এটি আপনার টিমের সদস্যদেরকে দক্ষতার সাথে কাজ করতে সহায়তা করে এবং তাদের মনের ভাব প্রকাশে উৎসাহিত করে।
বর্তমানে এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রায় অর্ধেক জায়গাই দখল করে নিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ফলস্বরূপ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য একজন ব্যক্তিকে একাধিক দক্ষতার অধিকারী হতে হবে। ঠিক তেমনি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হচ্ছে সফট স্কিল যা কিনা কর্মচারী কিংবা শিক্ষার্থী উভয়েরই উচিত আয়ত্ত করা।
Join our soft skills training: https://www.forensicbd.org/event/soft-skills-training-program
সিনথিয়া স্বর্ণীল
অনার্স ৩য় বর্ষ
সরকারি তিতুমীর কলেজ